Friday, September 23, 2011

অভিহিত মূল্যে সমতা আনতে এসইসির নির্দেশনা জারি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা করার নির্দেশ দিয়েছে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনায় আগামী ১ ডিসেম্বর ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের সবগুলো কোম্পানির রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৪ ডিসেম্বর থেকে অভিন্ন অভিহিত মূল্যে এসব কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হবে।
 এসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেনের আদেশে প্রকাশিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের অভিহিত মূল্য ১০ (দশ) টাকা নয়, সেসব কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডকে আগামী ৩০ নভেম্বর ২০১১-এর মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা পরিপালনসাপেক্ষে ৪ ডিসেম্বর ২০১১ থেকে অভিন্ন অভিহিত মূল্যে অর্থাত্ ১০ টাকা অভিহিত মূলে মাধ্যমে লেনদেন শুরু করতে হবে। এ জন্য ১ ডিসেম্বর রেকর্ড ডেট ধার্য করা হয়েছে এবং কোম্পানিগুলোকে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করতে হবে না। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। বিনিয়োগকারী ও শেয়ারবাজারের স্বার্থে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (Ordinance No.XVII of 1969) এর সেকশন ২০-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এসইসি এ আদেশ জারি করে। 
 অন্যদিকে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানি শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে এসইসি সূত্রে জানা গেছে। অভিন্ন অভিহিত মূল্য করার ফলে আগের অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির কারসাজির প্রক্রিয়া বন্ধ হবে।
 গত ২৩ আগস্ট শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির অভিহিত মূল্য ১০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয় এসইসি। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব কোম্পানিকে বোর্ড সভা ও ইজিএম করে এসইসি, আরজেএসসির অনুমোদন নেয়ার নির্দেশ দেয় এসইসি। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলের সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
 অর্থ মন্ত্রণালয় গত ২৯ মে শেয়ারবাজার তদন্ত কমিটির ১৪টি সুপারিশ অধিকতর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এসইসির কাছে প্রেরণ করে। এর মধ্যে অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ আটটি সুপারিশ এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়। অন্য ছয়টি সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য তিন মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়। 
 ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ২৭০টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ১৩৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। এর মধ্যে কোম্পানির সংখ্যা ১২৪টি এবং মিউচুয়াল ফান্ড ১২টি। এ ছাড়া ১ টাকা অভিহিত মূল্যের এইমস প্রথম মিউচুয়াল ফান্ডটির অভিহিত মূল্যও ১০ টাকায় রূপান্তর করতে হবে। শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাইরে তিনটি করপোরেট বন্ড রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির অভিহিত মূল্য এক হাজার টাকা। বাকি সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। 
 প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত শেয়ারবাজারবিষয়ক সমন্বয় সভায় সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য অভিন্ন করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। ওই প্রস্তাবে সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়। সেদিনের বৈঠকে ভবিষ্যতে সব কোম্পানির শেয়ারের অভিহিত মূল্যে সমতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে তালিকাভুক্তির জন্য আসা সব কোম্পানির মার্কেট লটও অভিন্ন হওয়া উচিত বলে মন্ত্রণালয়ের সভায় মত প্রকাশ করা হয়। 
 পরবর্তী সময়ে একই বছরের ১০ নভেম্বর এসইসির পরামর্শক কমিটির এক সভায় সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা এবং মার্কেট লট ২৫০টি করার সিদ্ধান্ত হয়। পরামর্শক কমিটির সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো ক্ষমতা নেই বলে বৈঠকের মতামত সুপারিশ আকারে এসইসির কাছে তুলে ধরা হয়। সে সময় এসইসি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ৫ নভেম্বরের সভার সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে তাদের শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়। এ অবস্থায় এসইসি অর্থমন্ত্রীর মতামত চাইলে মন্ত্রণালয় আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এসইসি সম্মতি দিতে পারে বলে অর্থমন্ত্রী মত দেন। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল শেয়ারবাজারের সব শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করে এসইসি সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায়। যদিও এসইসি ১ মার্চ জারি করা এক আদেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে শেয়ারের অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়। পরে অর্থমন্ত্রী সব সিকিউরিটিজের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা করার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া শেয়ার কারসাজির তদন্ত কমিটিও অভিন্ন অভিহিত মূল্য করার সুপারিশ করে। তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানির অভিহিত মূল্য পরিবর্তনের কারণেই ২০১০ সালে শেয়ারবাজার অতিমূল্যায়িত হয়েছিল বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা রয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই সব সিকিউরিটিজের অভিহিত মূল্য অভিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান এসইসির মুখপাত্র সাইফুর রহমান। তবে এই পরিবর্তনের জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কোম্পানির অভিহিত মূল্য সংক্রান্ত সংঘ স্মারক ও সংঘ বিধির সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি বোর্ডকেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
Source

No comments:

Post a Comment